ঢাকা , রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫ , ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহরম: আত্মত্যাগ ও ন্যায়ের এক অমর ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০৭-০৬ ২০:৩৬:৩৮
মহরম: আত্মত্যাগ ও ন্যায়ের এক অমর ইতিহাস মহরম: আত্মত্যাগ ও ন্যায়ের এক অমর ইতিহাস


মোঃ আব্দুল্লাহ আল মুকিম রাজু


বিশেষ প্রতিবেদন : ইসলামি বর্ষপঞ্জির সূচনা ঘটে মহরম মাস দিয়ে, আর এই মাসই ইতিহাসের পাতা রক্তাক্ত করে রেখে গেছে আত্মত্যাগ, সাহস ও ন্যায়ের এক অবিনাশী দৃষ্টান্ত। মহরম মাস হিজরি বছরের প্রথম মাস।


ইসলামী শরিয়তে চারটি সম্মানিত মাসের একটি হিসেবে এই মাসকে বিবেচনা করা হয়, যেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম (নিষিদ্ধ)। তবে এই পবিত্রতার মাঝেই লুকিয়ে আছে মুসলিম উম্মাহর জন্য গভীর শোক, শিক্ষা ও আত্মজিজ্ঞাসার এক ঐতিহাসিক অধ্যায়—কারবালার হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডি। আশুরা ও কারবালার ঘটনা


৬১ হিজরি, ১০ মহরম। বর্তমান ইরাকের কারবালা নামক প্রান্তরে সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসে এক অমর ও করুণ যুদ্ধ। তৎকালীন জালিম শাসক ইয়াজিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (র.) মাত্র ৭২ জন সঙ্গীসহ শহীদ হন।


তাদের অপরাধ ছিল একটিই—তারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। কারবালার এই ঘটনাকে, কেন্দ্র করেই আশুরা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে আত্মত্যাগ ও ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। এই দিন মুসলমানদের হৃদয়ে শুধু বেদনা নয়, বরং সংগ্রাম ও সত্যের পথে অবিচল থাকার এক চিরন্তন প্রেরণা হয়ে আছে।


আশুরার আমল ও তাৎপর্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আশুরার দিনে রোজা রেখেছেন এবং তাঁর উম্মতদের তা পালন করতে বলেছেন। আশুরার দিনে বিশেষ দোয়া, তওবা, দান-সদকা ও ইবাদতের মাধ্যমে মুসলিমরা এই দিনের মর্যাদা রক্ষা করেন। অনেকে ৯ ও ১০ মহরম অথবা ১০ ও ১১ মহরম রোজা রাখেন, যাতে ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনুরূপ না হয়।


বাংলাদেশে মহরম পালনের চিত্র, বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে এই দিনটি যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে ধর্মীয় আলোচনা, দোয়া মাহফিল, তাজিয়া মিছিল ও রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন মসজিদ ও সংগঠন আশুরার গুরুত্ব নিয়ে বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করেছে।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আশুরা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, যাতে অনুষ্ঠানগুলি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়।
আত্মশুদ্ধির আহ্বান মহরম কেবল শোকের মাস নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মত্যাগ, ন্যায় এবং মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়। ইমাম হোসাইন (র.)-এর আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা শিখি—জীবনের চেয়ে আদর্শ বড়, আর অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করাই মুসলমানের আসল পরিচয়।


আশুরা আমাদের কাঁদায়—হ্যাঁ, তবে সেই কান্না পরাজয়ের নয়, বরং এক মহান বিজয়ের, যেখানে মৃত্যু হয়েছিল সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো এক সাহসী মানবিকতার।
কারবালা শুধু ইতিহাস নয়, এটি প্রতিদিনের জীবনে সত্য, ন্যায় ও সহমর্মিতার এক জীবন্ত শিক্ষা।





 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ